এই কথাবার্তা একধরনের জুয়াখেলার মতো অথবা নিম্নচাপের পূর্বাভাস দেওয়ার মতোই। ফল না জেনে একটি ঘটনাপ্রবাহের ময়নাতদন্ত, হাইপোথেটিকাল জুয়াচুরি। অ্যানার্কিস্ট বন্ধু সুরজিৎ সেনের সঙ্গে যখন এই কথাবার্তা হচ্ছে তখন ভোটের ফল অনুমান করা সম্ভব ছিল না। আমার পক্ষে তো না-ই, রবীশ কুমারও জানতেন না কী হতে চলেছে। আমি শুধু চেয়েছিলাম আমার নিজস্ব আতসকাচের তলায় ফেলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির গতিপ্রকৃতিকে দেখতে, যে ভাবে অ্যাকোরিয়াম দেখে মৎস্যপ্রেমী।
তুমি বেশ কিছুদিন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হলেও রাজনৈতিক সংবাদদাতা হিসেবে বোধ হয় এটা তোমার প্রথম পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। চারপাশের হাওয়া কেমন লাগছে?
হ্যাঁ, ভেবেছিলাম কালচারাল জার্নালিজমে যাব। তখন আমি-আপনি একই সংস্থায় কাজ করতাম, কালচারের শ্রাদ্ধশান্তি করতাম। সংস্থাটা উঠে গেল। কালচারের অবস্থাও এত করুণ, নিজেকে সরিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় রইল না, আসতে হল দ্বিতীয় মোহগর্ত— রাজনীতি নিয়ে তিকরমবাজিতে। এর আগে লোকসভা নির্বাচনে কাজ করেছি। বিধানসভা কভারের প্রশ্নে এটাই আমার প্রথম স্পেল। চারপাশে হাওয়া গরম। নির্বাচনের সব শর্তাশর্ত আমূল বদলে গেছে, যে বুঝবে থাকবে, যে বুঝবে না মুশকিলে পড়বে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ রাজ্যের শ্রমদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে বোমা বিস্ফোরণে হত্যার চেষ্টা হল মুর্শিদাবাদ জেলার নিমতিতা রেল স্টেশনে। এর আগে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বহু হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু ঠিক এরকমটা হয়নি। এ-ব্যাপারে তোমার কী বক্তব্য?
আপনি তো জানেন বাংলার সীমান্ত সংলগ্ন বেশিরভাগ এলাকাতেই একটা প্যারালাল ইকোনমি চলে। কাফ সিরাপ, ইয়োবা, গোরু, বেশ্যা— ‘পাচারযোগ্য’ নানা কিছুই আছে এই অর্থনীতির পণ্য হিসেবে। এখান থেকে টাকা রাজনৈতিক দলের ফান্ডে যায়। এইসব এলাকায় বন্দুক ধরা কোনো বড়ো ব্যাপার নয়। কোচবিহার অঞ্চলে এক বিরাট রাজনৈতিক নেতা তো আর্মস ব্যবসায়ী হিসেবেই নাম করেছিলেন। যাই হোক, মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও এর বাড়বাড়ন্ত তো হবেই। সীমান্তবর্তী এলাকার মস্তানদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা হচ্ছে, হবেও, অস্ত্রশস্ত্র-সহ বেশ কিছু লোক ধরা পড়বে। মুর্শিদাবাদে যেটা নতুন সেটা হল আই.ই.ডি. বিস্ফোরণ। নির্বাচনের আগে রিমোট বোমা ব্যবহার আমরা আগে খুব একটা দেখিনি। জাকির বিরাট ব্যবসায়ী, ঠোঁটকাটা। তাঁর শত্রু থাকা অস্বাভাবিক নয়। শত্রুটা রাজনৈতিক না এই ব্যবসায়িক রেশারেশির ফল, সেগুলি জানতে চাই আমরা সকলেই। স্থানীয়ভাবে দারুণ জনপ্রিয় জাকির। আপাতত এই নিয়ে নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের তিনটে দল তদন্ত করছে, এন.আই.এ. দেখছে। সিপিএম আমলেও ইলেকশন ভায়োলেন্স ছিল, হাতকাটা দিলীপের হাত কেন কাটা? কিন্তু এগুলি সব আমাদের কাছে আসত প্রতিবেদন আকারে, ছাপার অক্ষরে। ফেসবুকের জমানায় লাইভ দেখতে পারছি তাই সিনেমার ঝটকা লাগছে। মনে হচ্ছে ওয়াসিপুরে বসে আছি।
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বিধানসভা নির্বাচন হয় ১৯৫২ সালে সদ্য হওয়া দেশভাগ আর হিন্দু–মুসলমান দাঙ্গার স্মৃতি নিয়ে। সেই নির্বাচনেও অখিল ভারতীয় রামরাজ্য পরিষদ ১৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েও ১টি আসনেও জেতেনি। এই পরিষদ পরবর্তীকালে ভারতীয় জনসংঘে মিশে যায়, যে ভারতীয় জনসংঘ জন্ম দেয় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)। এইবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির লোকসভা আসনের সংখ্যা ১৮। সে-হিসেবে তাদের বিধানসভায় টারগেট আসন ৯০, যেটাকে তারা ১০০-তে নিয়ে যেতে চাইছে। আর তাদের জেতা বিধায়ক আছে ২৭। ক্ষমতায় আসতে গেলে চাই ন্যূনতম ১৪৮। বাকি ২১ জনকে হয়তো কিনেই নেবে। এই ম্যাজিক ফিগারের অঙ্ক নিয়ে তোমার কী ধারণা?
এই যে কিনে নেওয়ার কথা বলছেন, সেটা তো শুরু হয়েই গেল। ম্যাজিক ফিগার নিয়ে আমার তত্ত্বটা এখানে বলে ফেলার সমূহ বিপদ আছে। আমি এবার নির্বাচনের নির্ণায়ক ফ্যাক্টরগুলির কথা বলি বরং। বামেরা কোথায় ভোট দিচ্ছে সেটা এবার বড়ো ফ্যাক্টর হবে। এবারের ভোটের ফল নির্ধারণ হবে ভোটের পরে। দলত্যাগ বাংলায় ছিল না এমন নয়। ঘোড়া কেনা-বেচাটা এবার শুরু হয়েছে এবং চলবে। ৮৩ টা বিধানসভা কেন্দ্রে মতুয়া ভোট একটা ফ্যাক্টর, মুসলমান ভোট হবে না হবে না তার ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই সরকারের থাকা না-থাকা। উত্তরবঙ্গে বিজেপি অ্যাডভান্টেজে আছে, কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগণায় তৃণমূল কিছুটা অ্যাডভান্টেজে আছে। বিজেপি ভোট রাজনীতিটা কীভাবে করছে? বাংলার জনসংখ্যাকে তারা অসংখ্য ছোটো ছোটো বর্গে ভাগ করে নিয়েছে। রাজবংশী, আদিবাসী, জেলে, শিক্ষক, মতুয়া, হিন্দুত্ববাদী, হোয়াট্সঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির ছাত্র। একটি বর্গের অংশ অন্য বর্গেরও শরিক হতে পারেন। যেমন এক জন জেলে হোয়াট্সঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির ছাত্র হতে পারেন। কিন্তু প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলের উপর নির্বাচনী সমীকরণ দাঁড়িয়ে রয়েছে।
এতদিন মমতা ব্যানার্জি নিজের জোরেই নির্বাচন জিততেন, ওঁর সেই ক্ষমতাও আছে, যে-ক্ষমতায় উনি একা কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেন, জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন। এবার তিনি ভোট বাহাদুর প্রশান্ত কিশোরের ল্যাজ ধরে বিধানসভার বৈতরণি পেরোতে চাইছেন। ওঁর আত্মবিশ্বাসে কী এমন ঘাটতি পড়ল যে প্রশান্ত কিশোরকে দরকার পড়ল?
এই প্রশ্নটার উত্তর ভেঙে ভেঙে বিশদে দিতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেবল নিজের জোরেই ক্ষমতায় এসেছেন— একথা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। বামপন্থীরা নব্বই দশক থেকে গ্রামে মফস্সলে যে-রাজনীতিটা প্র্যাকটিস করেছে শেষ দুই দশক, তার ওপর মানুষ বিরক্ত ছিল, যা মমতার পক্ষে গিয়েছিল। ভেড়ি দখলের লড়াই, পঞ্চায়েত ভোটে পেশিশক্তি প্রদর্শন, পারিবারিক সমস্যায় লোকাল কমিটির নাক গলানো মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। বুদ্ধবাবু সিপিএম-এর প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি সে-অর্থে রাস্তার রাজনীতি করেননি। বিমান বসুদের মতো মার খাননি। সিপিএম তাঁকে চেয়েছিল শুদ্ধিকরণের প্রশ্নে। পুরোনো সিপিএম এটা খুব ভালোভাবে নেয়নি। সেই সময়ের একটি বিখ্যাত ছবি, কে ফোটোগ্রাফার ছিল আজ আর মনে নেই, ছবিটা ছিল বুদ্ধ-বিমানরা লেনিন মূর্তিতে মালা দিচ্ছেন আর দূরে দাঁড়িয়ে দেখছেন সুভাষ চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বুদ্ধবাবু গদিতে বসে জ্যোতি বসুর মতো সংগঠন আর প্রশাসনকে মেলাতে চাননি। ডিওয়াইএফআই-এর বদলে তিনি পুলিশের সাহায্য নিতে চেয়েছিলেন নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুরে। হিতে বিপরীত হয়েছে। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, আগে রক্তদান শিবির হত রক্ত দিয়ে গড়ব বক্রেশ্বর স্লোগানে। একটা সরকারের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের সঙ্গে এই হাস্যকর স্লোগানের কী সম্পর্ক এই নিয়ে মানুষ প্রশ্ন করেনি, বরং বিগলিত হয়েছিল। বুদ্ধবাবু এই কাজটা পারেননি। এর সঙ্গে ছিল মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্ত। সেটাও মোকাবিলা করা মুশকিল হচ্ছিল বামেদের পক্ষে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশির দশক থেকে রাজনীতি করেছেন, কিন্তু তাঁর পালে হাওয়া লেগেছে বুদ্ধবাবুর আমলেই। অর্থাৎ এই পরিস্থিতিটা তাঁর পক্ষে গেছে মানুষ বিকল্প চাইছিল বলে। তখন ‘বুদ্ধ আসছে জমি কাড়তে’ স্লোগানটাই মানুষের মনঃপুত হল। আর নন্দীগ্রাম হয়ে দাঁড়াল ক্লাইম্যাক্স। মমতার রাস্তার রাজনীতিটা তাঁকে একটা সিস্টেমের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
এবার আসি দ্বিতীয় ধাপটায়। এতক্ষণ যে-কথাগুলি বললাম সেটা একটা অন্য সময়ের কথা। বিশ্বরাজনীতির ভোল গত দশ বছরে আমূল বদলে গেছে। মমতার মসনদ দখলের পলিটিক্স বলুন আর সিপিএম-এর ৩৫ বছর ক্ষমতা ধরে রাখা, এখানে কর্পোরেটের কোনো ভূমিকা ছিল না। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে রাজেশ জৈন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেখান। প্রেজেন্টেশনটার নাম ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ২০১৪। এর ঠিক চার মাস বাদে গুজরাট সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা গুজরাট ইনফরমেটিক্স লিমিটেডে ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত হন রাজেশ জৈন। পরবর্তী তিন বছর অন্য বহু উদ্যোগপতি, ব্যাঙ্কার, আইটি সেল, সাংবাদিকদের মতোই জৈন যে-কাজটা সাফল্যের সঙ্গে করে গেছেন অধুনা লব্জে তাকে বলে রাজনৈতিক বিপণন। এই যে মিস্ড কলে বিজেপিতে যোগ দেওয়া, এটা রাজেশের মস্তিষ্কপ্রসূত। বিজ্ঞাপন জগতে যেটা মার্কেট সেগমেন্টেশন বলে পরিচিত, ভোটার ডেটাবেস নিয়ে সেই কাজটা করেছিলেন রাজেশ, একটা ভার্চুয়াল মানচিত্র তৈরি করেছিলেন, যা দেখলে একজন ভোটার কোথায় থাকেন, শহরাঞ্চল না গ্রামাঞ্চল, তাঁর ধর্ম কী, বর্ণ কী, সব জলের মতো বোঝা যাবে। ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপ, ট্যুইটারকে কোথায়, কীভাবে, কতটা ব্যবহার করতে হবে, বিজেপির আইটি সেলকে তা বুঝতে সাহায্য করে এই ডেটাবেস। এর পাশাপাশি বলে রাখি প্রশান্ত কিশোরের প্রথম বড়ো ক্লায়েন্ট নরেন্দ্র মোদি। ২০১১ গুজরাট নির্বাচন থেকে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন, নরেন্দ্র মোদির জন্য কাজ করেছেন প্রশান্ত কিশোর। ‘চায়ে পে চর্চা’-র মতো ক্যাম্পেইন তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। বিখ্যাত সাংবাদিক করন থাপার একসময়ে বলেছিলেন, ইন্টারভিউতে কঠিন প্রশ্ন কীভাবে ফেস করতে হয় সে-ব্যাপারেও মোদিকে ট্রেনিং দিতেন প্রশান্ত কিশোর। ২০১৪-২০২১ গোটা দেশে বিজেপির উত্থান আমরা দেখেছি— ২০১৫-তে বিহারে, ২০১৭-তে পাঞ্জাবে প্রশান্ত কিশোরকে ব্যবহার করে ফল পেয়েছেন নীতিশকুমার, অমরিন্দর সিংরা। এবার আপনিই বলুন, মমতার যতই ব্যক্তিগত ক্যারিশমা থাকুক, এই কর্পোরেট শক্তির সঙ্গে লড়াই কর্পোরেট স্ট্র্যাটেজি ছাড়া চলবে? আর সেক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোর ছাড়া মমতার কোনো বিকল্প আছে?
২০১১ থেকে ২০২১— এই ১০ বছরে দুটো বিধানসভা নির্বাচনে জিতে, রাজ্য শাসন করে, এই বারের নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জিকে অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সি ভোটের মোকাবিলা করতেই হবে, কারণ সিপিএমের মতো ইলেকশন মেশিনারি (যার নাম মার্কসবাদ সর্বশক্তিমান, কারণ ইহা বিজ্ঞান) মমতা ব্যানার্জির নেই, তার ওপর দল ভাঙছে— এই বিরোধী ভোট কোথায় যাবে বলে মনে হয়?
কঠিন। দল ভাঙাটা মমতার পক্ষে ভালো না খারাপ? আমার অবজারভেশন— ভালোই। যাঁরা মমতার হাত ছেড়েছেন প্রত্যেকেই নানাভাবে কোনঠাসা। দল ছেড়ে তাঁরা বরং চিহ্নিত হয়ে গেলেন। যুক্তি দিয়ে যাঁরা ভাবতে পারেন তাঁরা বলবেন, এটা মমতার দলের জন্য শাপে বর, এক ধরনের শুদ্ধিকরণ। মমতাও ‘আব কি বার মোদি সরকার’ এই ঢঙে বলতে পারছেন— ‘সব কেন্দ্রে আমিই প্রার্থী’, আগে রেখেঢেকে বলতে হত। দেখতে হবে এই ‘আমি’ ফ্যাক্টরটা মমতা কতটা এক্সপ্লয়েট করতে পারেন। ভাবতে হবে, মমতা বিরোধিতার জায়গাগুলি কী কী। আমার মনে হয় না ‘দুর্নীতি’ প্রশ্নে মমতা বিরোধিতার জায়গা খুব জোরালো হয়েছে, এই মহাদেশেই পপুলিস্ট জননেতা বা নেত্রীরা কোরাপশন করবেই, অল্পবিস্তর এটা একরকম ধরেই নেওয়া হয়েছে। জয়ললিতার কথা ভাবুন, দুর্নীতিতে জনপ্রিয়তা কমেছে না বেড়েছে? দুর্নীতি প্রশ্ন হলে তো ২০১৬-তে মমতার ক্ষমতায় আসারই কথা নয়। আমরা রাফাল দুর্নীতি নিয়ে একটা বই প্রায় বিনে পয়সায় বিলিয়েছিলাম ২০১৮-১৯ সালে। আমার বন্ধুরাও আমায় ভালোবেসে পড়েছে কি না সন্দেহ। আমার দিল্লির কিছু বন্ধু করোনার সময়ে ভেন্টিলেটর স্ক্যাম নিয়ে কাজ করছিল। তারাও সান্ধ্য আড্ডায় একই কথা বলেছে, মানুষ এই নিয়ে বিরাট মাথা ঘামায় না। অনুদান এবং খয়রাতির রাজনীতি, তোষণ, মমতার অনুকূলে একটা বড়ো সংখ্যক ভোট এনেছে। আবার এটাই নতুন শক্তি বিজেপিকে কিছু ভোট পাইয়ে দেবে। কিন্তু সিপিএম বিরোধিতা করতে মানুষের মমতা ছিল, মমতা বিরোধিতা করতে রাজ্য বিজেপির কে? আমি সব ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলি, সেখান থেকে যা বুঝি, বিজেপির কাজ, উন্নয়ন করেছে না করেনি সেটা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কোনো স্পষ্ট ধারণাই নেই। থাকার কথাও নয়। যেটা আছে সেটা হল মোদির একটা লার্জার দ্যন লাইফ ইমেজ। বিজেপির সেটাই ভরসা। মমতার লড়াইটা সেই দানবের সঙ্গেই। বিরোধী ভোটটা মোদি-অমিত শাহ টানবেন। শুভেন্দু অধিকারীরা গর্জাবেন, বর্ষানো খুব সহজ কাজ নয়। সিপিএম নিজেকেই নিজে ভোট দেয়নি ২০১৬-তে, প্রমাণিত তথ্য। এখন টেট, এস.স.সি. মইদুলের মৃত্যু, দুর্নীতি প্রশ্নে তাঁরা যদি নিজেদের প্রতীকে ভোট দেন তবে বিষয়টা ইন্টারেস্টিং হবে।
পশ্চিমবাংলার যে রাজনৈতিক ঐতিহ্য, প্রাক্ স্বাধীনতা আমল থেকেই বাঙালি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের অংশ হলেও স্বতন্ত্র। চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষচন্দ্র বসু থেকে বিধানচন্দ্র রায় বা জ্যোতি বসু পর্যন্ত। সেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এত শক্তি এল কোথা থেকে, যে-পার্টিকে আমরা রসিকতা করে বিলীয়মান জনতা পার্টি বলতাম?
সবটা একদিনেই হয়নি। শহুরে টিভি দেখা মধ্যবিত্তরা টিভিই দেখে, বা টিভি যা দেখায় তাইই দেখে। এই নিয়ে ম্যাক্সওয়েল ম্যাকম্বস, ডোনাল্ড শ, নোয়াম চমস্কিদের অ্যাজেন্ডা সেটিং থিওরি রয়েছে। এখন সেই থিওরি কপচাচ্ছি না। যেটা বলার সেটা হল, অধ্যাপক হরিপদ ভারতী ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির প্রার্থী হিসাবে অধুনালুপ্ত জোড়াবাগান বিধানসভা কেন্দ্রে লড়াই করে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম-এর হরপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করেন এবং বিধায়ক হন। তিনি ৪৬.৯৯ শতাংশ ভোট পান। হরপ্রসাদবাবু পেয়েছিলেন ২৭.৪১ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস প্রার্থী শ্রীমতী ইলা রায় ২৪.২ শতাংশ ভোট পান। মনে রাখতে হবে, সালটা ১৯৭৭, শহরটা কলকাতা, সিপিএম ক্ষমতায় আসছে। হরিপদ ভারতী অসম্ভব ভালো বক্তৃতা করতেন, তাঁরই মানসপুত্র তপন শিকদার। এঁরা আন্ডারগ্রাউন্ড অপারেশনের মতো করে দলটাকে তৈরি করেছেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কথা বলি। এই সংঘের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার তো কলকাতার ছেলে। ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতায় এসেছিলেন। ১৯১০ সালে মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তেন। ডাক্তারি পাস করে ফিরে যান নাগপুরে। যাওয়ার আগে তিনি সংঘের বীজটা কারও কারও মনে বুনে দিয়ে গিয়েছিলেন। শহুরে বামপন্থীদের কোনো ধারণা আছে কবে থেকে মালদহ, হাওড়ায় আরএসএস-এর শাখা চলছে? এই যে বিদ্যাসাগরের মূর্তিভাঙা নিয়ে এত চিন্তা, বিদ্যাসাগরের কার্মাটোরের বাড়িটাও তো আরএসএস-এর দখলে। এই শিবিরগুলিতে কত মানুষের যাতায়াত তার ধারণা পেতে গেলে একদিন গিয়ে দেখতে হবে। মালদহ আরএসএস-এর সঙ্গে কথা বলছিলাম। এখানকার কমলি সোরেনকে এবার পদ্মশ্রী দিল বিজেপি। কমলি তো একজন আরএসএস কর্মী, কয়েক দশক ধরে হিন্দুকরণের কাজ করছেন। তাঁকে নিয়ে শহরের সেমিনারে আলোচনা শুনেছেন আগে, কিন্তু মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় আলোচনা শুনেছেন? বাবরি কাণ্ডে পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া রাম কোঠারি, শরদ কোঠারি তো কলকাতা থেকেই গিয়েছিলেন। কাজেই আমি যা দেখতে পাই না তা নেই এমনটা নয়। আছে। আমরা বুঝিনি। ধাপে ধাপে শক্তি সংগ্রহ করেছে সংঘ এবং বিজেপি। এটাই এদের অপারেশনের মডেল। তাছাড়া সিপিএম-এর সমস্ত দুর্বলতার পাশাপাশি যে কৃতিত্বটাকে মাথায় রাখতে হয়, তা হল ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনীতি তারা আটকাতে পেরেছিল। মমতা পারেননি, পারার কথাও ছিল না। এই সময়কালটাকে বিজেপি ব্যবহার করেছে মেরুকরণের রাজনীতির বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য।
২০১৮ সালে আরএসএস–এর প্রধান এখানে এসে বলেছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গের ৩৩৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৮০০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে তাঁদের শাখা আছে, ২০২১-এর নির্বাচনের আগে তাঁরা সবকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে তাঁদের শাখা খুলে ফেলবেন। ৩৪ বছরের বাম শাসন আর ১০ বছরের তৃণমূল শাসনে এটা হল কী করে?
এই প্রশ্নের উত্তরটা আমার আগের উত্তরেই বিশদে বলা আছে। আমরা প্রচারমাধ্যমে যা দেখতে পাইনি তাকে নেই ভেবেছিলাম। এই যে বামেদের লিফলেট-পুস্তিকা, বহু বছর আগে থেকে গ্রামে গ্রামে আরএসএস এমন পত্রিকা বিলি করে। সেখানে আদর্শ হিন্দু নারীর কর্তব্য থেকে হিন্দু রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বহু বিষয়ে নানাবিধ ‘জ্ঞান’ থাকে, আমরা খোঁজ রাখিনি। একই ধরনের রেজিমেন্টেশন থাকায় কমিউনিস্ট পার্টির এখানে পৌঁছোনোর কথা ছিল। তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে যেখানে, সেখানেই আরএসএস হাত বাড়িয়েছে।
সম্প্রতি ফুরফুরা শরিফ থেকে ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ নামে একটি দল পাপড়ি মেলেছে। তারা বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করেছে। এতে বামেদের মন এতই ফুরফুরে হয়ে আছে যে তারা বলছে ‘সেকুলার’ নাম রাখাটাই তাদের পক্ষে বিরাট নৈতিক জয়। এই মৌলবাদী সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে প্রেম বামেদের বাক্সে কত মুসলিম ভোট আনবে?
অনেকে বলছেন মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক মাথায় রেখে এই জোটে যাচ্ছে সিপিএম। কিন্তু সিদ্দিকির ক্রেডিবিলিটি কী? আমার ধারণা ভোট টানতে ওকে বামেরা নেয়নি। নিয়েছে সব কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে পারছে না বলে। একই সঙ্গে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে। এমন বিপজ্জনক কথা কেন বলছি, তার ব্যাখ্যা দিয়ে দিই। সিপিএম-কংগ্রেস বলছে সিদ্দিকি ধর্মনিরপেক্ষ। এদিকে কয়েক মাস আগেই আব্বাস সিদ্দিকি জলসায় হাজার হাজার মানুষের সামনে ফ্রান্সের প্রকাশ্য রাস্তায় প্যাটি স্যামুয়েল হত্যাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তৃণমূলের অভিনেত্রী সাংসদকে বেশ্যা বলেছেন। এবং গাছে বেঁধে পেটানোর নিদান দিয়েছেন। সিপিএম-এর কেউ এগুলো জানেন না তা তো নয়, তাঁরা অ্যাপ্রোপ্রিয়েট করছেন। এখন এর বিরুদ্ধে বললেই প্রথম শব্দটা বলা হবে তুমি আনন্দবাজার, মানে এরা যে-সংবাদমাধ্যমকে একমাত্র ঈশ্বর বা দৈত্য ধরেই নিয়েছে, সেখানে আপনি চাকরি করুন বা না করুন। সিপিএম নেতারা অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুমারী কি না তাই নিয়ে আলোচনা করেছেন, কিন্তু তিনি তো ব্যক্তিমানুষ। আরেকটা কথাও বলি, কংগ্রেসের সঙ্গে বাম জোটও কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ইতিহাসগতভাবেই হাস্যকর। তাহলে ৩০ বছর লড়াই করা কেন কংগ্রেসের সঙ্গে? এই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলে কী হয় তা বিহারে আরজেডি, সিপিআইএমএল জানে। অনেকে বলবেন সর্বভারতীয় দল হিসেবে বিজেপি সামান্য হলেও প্রতিস্পর্ধী। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতিতে বিহার-বাংলায় এসব কথা খাটে না। সিদ্দিকির মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে জোট করার ক্ষেত্রে দলীয় আদর্শের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। বিষয়টা নিয়ে পরে না আবার ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলতে হয়। এ-বিষয়ে আমি অবশ্য বহিরাগতও। মুসলমান সমাজ যদি সিদ্দিকিকে তাদের প্রতিনিধি করে তবে আমি কে এ-বিষয়ে কথা বলার। আপাতত বলা যায়, আব্বাস নিজে আপাতত বামেদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ তৃণমূলের ভোটকাটার হারাকিরি খেলায়।
পশ্চিমবঙ্গের প্রায় দু-কোটি তপশিলি জনসংখ্যার প্রায় ৯৯ শতাংশ হিন্দু এবং তার ২০ শতাংশ নমশূদ্র। গত ১০ বছরে এই অ-বর্ণহিন্দু ভোটব্যাঙ্ক কি হিন্দি বলয়ের সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের রাজনীতিকে পশ্চিমবঙ্গে বাস্তব করে তুলছে?
দেখুন ইউপি-বিহারের সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে এই রাজ্যের সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কার্যকারণ বা টেকনিকের ফারাক রয়েছে। লালুপ্রসাদ যাদব রামরথ আটকে দিয়ে, আডবানিকে আটকে দিয়ে, মুসলমান সমাজেও একটা বার্তা দেন। আবার হিন্দু ক্যানোপিতে বর্ণের রাজনীতিকে ৭০ দশক থেকেই তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলার বামেরা তা করেনি, শ্রেণির রাজনীতি করেছে। এতে যেটা হয়েছে, রাজনীতি সমাজের প্রতিটি স্তরে বর্ণহিন্দু প্রতিনিধিত্ব তৈরি হয়ে গেছে। এতে তফশিলি জনজাতি পিছিয়ে পড়েছে। ‘নীচু’ কাজগুলি তাদের জন্যেই বরাদ্দ। অপরাধে তাদেরই এগিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও লক্ষ্যণীয়, জেলের ভিতর মৃত্যুর সংখ্যাতেও তারাই শীর্ষে। এই ফাঁকটা মমতা অ্যাড্রেস করেই হয়তো ঠাকুরনগর যাওয়া শুরু করেন। পাশাপাশি বিজেপিও তার সুবিদিত সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বীজ বপন করে। এখন তা গাছ হয়ে গেছে।
সিপিএমের আধিপত্যের রাজনীতির বিরুদ্ধে গণজাগরণ যদি নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়ে থাকে, পরের ১০ বছরে, বামপন্থীদের শ্রেণি আর আধিপত্যে ২০১১ সালের রাজনীতির (অন্তত তাত্ত্বিকভাবে) বিপরীতে কি এই অ-বর্ণহিন্দু ভোটব্যাঙ্ক একটি ক্যাটিগরি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে?
হ্যাঁ, এটা আগেই বললাম। বাংলার রাজনীতিতে বরাবরই মূল নির্ণায়ক শক্তি ছিল জমি। সিপিএম ক্ষমতায় এসেছে জমির পাট্টাকে হাতিয়ার করে। মমতাও তাই, ক্ষমতায় এসেছেন জমি ধরে। নন্দীগ্রাম পর্বের সাফল্যই বলে দেয় আর বিরোধী নেত্রী হয়ে লড়াই নয়, ক্ষমতায় আসছেন তিনি। মনে রাখব নন্দীগ্রাম মুসলিম প্রধান অঞ্চল। মুসলিম জনসংযোগে মমতা জোর দিয়েছেন প্রথম থেকেই। আবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অ-বর্ণহিন্দু ভোটব্যাঙ্কটা কতটা জরুরি তা মমতা বুঝতে পারেন। তিনি মতুয়ামহলে যোগাযোগ শুরু করেন, সেখান থেকে প্রতিনিধি তুলে আনেন, পাশাপাশি আদিবাসী সমাজে যাতায়াত বাড়ে তাঁর। মুসলিম সমাজে তাঁর মান্যতাও বাড়ে। এই সব ঘটনা থেকেই বিজেপি শিক্ষা নিয়ে তার সুবিদিত সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল এখানে ইনজেক্ট করে ধীরে ধীরে। লক্ষ্যটা ছিল বর্ণ এবং অ-বর্ণহিন্দুকে একজোট করা। সেটাই গেরুয়া পালে হাওয়া লাগিয়েছে ২০১৯ লোকসভা ভোটে। আজ কোরাপশন, অ্যান্টি ইনকামেবেন্সির পাশাপাশি অহিন্দু ভোটব্যাঙ্ক একটি নির্ণায়ক ফ্যাক্টর। এই কারণেই বিজেপি নেতারা লাঞ্চ পলিটিক্স করেন।
দেশভাগের পর, বর্ণহিন্দু উদ্বাস্তুরা অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন উদ্বাস্তু কলোনিতে আশ্রয় পেয়েছিল (অসবর্ণরা দণ্ডকারণ্যে, খুব কম সংখ্যক আন্দামানে)। তারা ঐতিহাসিকভাবে বামপন্থীদের সঙ্গে ছিল দীর্ঘদিন। ১৯৯৭-৯৮-তে প্রথম বিজেপি এই মানুষদের ভোট পায় হিন্দুত্বের রাজনীতিকে মূলধারায় নিয়ে এসে। তার পর থেকেই বামপন্থীদের পশ্চাৎপসারণ, অন্তত উদ্বাস্তু ভোটের ক্ষেত্রে। আবার অ-বর্ণহিন্দুদের মধ্যে নাগরিকত্বের প্রশ্ন একটা বড়ো গোলকধাঁধা। সিএএ-এনআরসি কি এই ভোটব্যাঙ্ককে প্রভাবিত করবে? অর্থাৎ, ধর্ম এবং জাত— এই দুই বিষয় কি বামপন্থীদের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে গ্রাম শহর নির্বিশেষে প্রান্তিক করে তুলছে?
ঠিক কোন বিষয়টি এ-বঙ্গে সিপিএমকে প্রান্তিক করে তুলছে তা বলতে গেলে তিরিশ হাজার শব্দ লিখতে হবে হয়তো। নব্বই দশকের ভেড়ি দখল থেকে শুরু করে বুদ্ধবাবুর সাংগঠনিক ব্যর্থতা থেকে ধর্মের ধ্বজা, লম্বা অভিজ্ঞান। এগুলি বললে লোকে তেড়ে মারতেও আসে। আপাতত আমি বলব no agenda beyond their own personal one of defeating Mamata Banerjee— এইটাই তাদের বেকায়দায় ফেলছে। এনআরসির মতো বিষয় নিয়ে বামেদের কোনো স্পষ্ট ব্যখ্যা বা পথে নামা চোখে পড়েনি। রাজনীতিতে থাকতে গেলে ইস্যু ধরতে হয়। সিএএ-এনআরসি নিয়ে অনেক ছোটো ছোটো গোষ্ঠী, শাহিনবাগ-পার্কসার্কাসের মেয়েরা, লিবারেলরা, ছাত্ররা যেভাবে দাপিয়েছে পথে, সংসদীয় বামেদের তাতে দেখা যায়নি। বরং সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, অসমে এনআরসি প্রয়োজনীয়। ফলে প্রান্তিক মানুষ এদের কতটা সিরিয়াসলি নেবে তা ভাবার আছে। এখন এই ঘটনায় মমতা স্পষ্ট বক্তব্য রেখে একদলের মান্যতা অর্জন করেছেন। বলা যায় এনআরসি-ই মমতাকে শক্তি বাড়ানোর নতুন অস্ত্র দিল। বিজেপি আবার এনআরসি দিয়েই মেরুকরণকে আরও জোরালো করেছে। যার যেমন রাজনীতি। এখান থেকে তো বলাই যায় ক্লাসের পাশাপাশি কাস্টকে অ্যাড্রেস না করাটা বামেদের সমস্যাদীর্ণ করে তুলেছে। ৯০ দশক পর্যন্ত বামেদের হাতে উদ্বাস্তু ভোট ছিল। ভোটার আইডি বানানো থেকে কলোনি তৈরি করে দেওয়া নীচুতলার মানুষের সব সুখ-দুঃখে পাশে থাকার জন্যই। মমতা পালের হাওয়া কেড়ে নেন পপুলিস্ট রাজনীতি দিয়ে। এখন সিএএ বা এনআরসি নিয়ে বামেদের বিভ্রান্তি আর বাকি দুই পক্ষের টানা মাঞ্জা বামেদের ইরেলিভেন্ট করবে না?