Non-Fiction Writing

পাঠান: সিনেমা নয় ভিডিও গেম

পাঠান সিনেমা নয় ভিডিও গেম

পাঠান প্রশ্নাতীত ভাবে সফল। বয়কট গ্যাংকে ফুৎকারে উড়িয়ে আসমুদ্রহিমাচল পাঠান-বন্দনায় অকৃপণ। শাহরুখ খান যেভাবে চার বছর পরে ফিরে এলেন তাকে আসা নয়, আবির্ভাব বলা চলে। কিন্তু স্রেফ পরিসংখ্যানের দিক থেকে সাফল্য ব্যর্থতা না মেপে, শাহরুখের সমস্ত কীর্তিকে স্যালুট জানিয়েই দূর থেকে যদি ছবিটিকে কোভিড পরবর্তী বলিউডের সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ছবি হিসেবে দেখি? তার ভাষা প্রাক্-কোভিড ছবির থেকে কতটা আলাদা? দৃশ্যায়নের ক্ষেত্রে কোন নতুন ভাবনাকে জায়গা দিলেন পরিচালক, এই কথাগুলি যদি চর্চায় আনা যায়, তাহলে আগামী দিনে হিন্দি ছবির রুটম্যাপ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

প্রতিদিনই সংবাদ শিরোনামে লেখা হচ্ছে পাঠানে শাহরুখ খান সাফল্যের এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। বহু সিঙ্গল স্ক্রিন ফের লক্ষ্মীর মুখ দেখছে। কিন্তু পাঠানের দৃশ্যভাষা দেখলে বোঝা যাবে বলিউডের কফিনে এটা সবচেয়ে গভীর পেরেক। বলিউডের সিনেমা ঐতিহ্যের বিস্তার যেমন, পাঠান তার থেকে একদম আলাদা। শাহরুখতন্ত্র বলতে ভারত যা বুঝে এসেছে পাঠান তার থেকে পৃথক এক পরম্পরার অংশ। এই ছবির চিত্রনাট্য, দৃশ্য নির্মাণ সবটাই হয়েছে গেমিং দুনিয়ার যুক্তি মেনে।

বলিউডের মশলা ছবি বলতে আমরা এমন এক চলমান দৃশ্যমালাকে বুঝি যা রোম্যান্স, অ্যাকশান, কমেডি, মেলোড্রামা আর সঙ্গীতে গড়া হবে। ঠিক যেমন এক একটা রান্নায় এক একটা বিশেষ মশলার আধিপত্য থাকে, তেমনই এই ধরনের ছবি উপরোক্ত উপাদানগুলিকে কমিয়ে-বাড়িয়ে ব্যবহার করে। সত্তরের দশক থেকেই সেলিম খান, জাভেদ আখতার, কাদের খানের মতো প্রবাদপ্রতিম চিত্রনাট্যকাররা এই জঁরটিকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। যদিও তাত্ত্বিকরা বলেন, বলিউডের ঢের আগে মশলা ছবি বানিয়েছিল তামিল ইন্ডাস্ট্রি। তবে একথা মানতেই হবে, এই তুককে শিখণ্ডী করেই গত কয়েক দশক এগিয়েছে বলিউড। অর্থাগম হয়েছে, একটা সাংস্কৃতিক পণ্যের স্থায়িত্ব তৈরি হয়েছে। তিন খানেরই সাম্রাজ্যের ভিত এই ধারার ছবি। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, পাঠান এই পুরাতনী ছকে বানানো নয়। এখানে দু’ঘণ্টা ছাব্বিশ মিনিট ধরে সমস্যা তৈরি হয় এবং নায়ক তার সমাধান খোঁজে। গেম তৈরির গোড়ার কথাটাই তো এই, একের পর এক জটিল সমস্য তৈরি করা এবং তা সমাধানের উপায়গুলি খুঁজে বের করা। মূল চরিত্র ব্যর্থ হলে সে আবার খেলায় ফিরতে পারে নতুন করে। পাঠান ছবিটায় শাহরুখকে যদি একটা গেমিং চরিত্র ভাবি, তাহলে দেখব, পাঠানের প্রথম মিশন ছিল রাষ্ট্রপতি এবং অভ্যাগতদের রক্ষা করা। সে এই কাজটায় আংশিকভাবে সফল হয়, শত্রু অধরাই থেকে যায়। এই শত্রুকে চেনা, জানা এবং হত্যা করাই প্রোটাগনিস্টের মূল উদ্দেশ্য। দ্বিতীয় ধাপে শক্তি বাড়িয়ে মূল যুদ্ধটায় অবতীর্ণ হয় সে। সেখানে সে ব্যর্থ হয়। আসে নতুন চ্যালেঞ্জ। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে গিয়ে এবার সফল ভাবে পাঠান শত্রুশিবিরে হানা দেয়। শত্রুনিধনে সে সাফল্য পায়৷ আপনি যখন ভাবছেন অলমিতি, তখন দেখা গেল পাঠানকে আরও দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ তার ক্ষমতায়ন হচ্ছে। এবার যদি আদি ভিডিও গেম সুপার মারিওর সঙ্গে এই চলনকে মিলিয়ে দেখা যায়, দেখা যাবে সুপার মারিও-ও একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, সেগুলি পেরোতে পারলে শেষে তাকে শত্রুনিধন করতে হয়, সেই শত্রু আকারে বড়, দৈত্যসম। লড়াইয়ে ব্যর্থ হলে আবার শুরু করার উপায় থাকে। আর সফল হলে ক্ষমতা বাড়ে, উচ্চতা বাড়ে। ১৯৮২ সালে জাপানি গেম-নির্মাতা সিগেরু মিয়ামতো সুপার মারিও তৈরি করেছিলেন। বিশ্বজুড়ে ঝড় তুলেছিল এই গেম। বিশ্বায়ন পরবর্তী ভারতের বড় শহরগুলি সেই ঝড়ের আঁচ পেয়েছিল। গত ৪০ বছরে তারপর গেমিং বিশ্ব আমূল বদলেছে, ক্রমেই তা বহুস্তরীয় হয়েছে, ঝাঁ চকচকে হয়েছে,একটা শক্তিশালী অর্থনীতি তৈরি হয়েছে গেমিংকে সামনে রেখে। এই মুহূর্তে বিশ্বে অনলাইন অফলাইন মিলে গেমারের সংখ্যা তিন বিলিয়নের বেশি। গেমিং ইন্ডাস্ট্রির মূল্যমান আনুমানিক ১৯৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু গেমিংয়ের মূল যুক্তিকাঠামোটা কিন্তু আজও সুপার মারিওর মতোই। অ্যাকশান থাকুক বা না থাকুক, চরিত্রকে প্রতিনিয়ত ক্ষমতা বাড়াতে গেলে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। সফল হতে হবে। শাহরুখ খান এই গেমিং বিশ্বের কথা জানেন বিলক্ষণ। পাশাপাশি জানেন সমষ্টির শ্বাসপ্রশ্বাস।

ইনভেস্ট ইন্ডিয়া পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২১ সালেই ভারতে অনলাইন গেমিংয়ে আার্থিক লেনদেন আগের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেড়েছে। অ্যাপ ডাউনলোডের বিচারে ভারত এখন বিশ্বের বৃহত্তম গেমবাজার। ৪০ কোটি  বড়-মাঝারি-ছোট গেমার রয়েছে এ দেশে, রয়েছে ৫০০-র বেশি গেম স্টুডিও, অসংখ্য গেম পার্লার। প্রায় এক লক্ষ ই-স্পোর্টস টিম পেশাদার গেম খেলে। অর্থাৎ এই বিপুল সংখ্যক মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে ওই সমস্যা, তার সমাধান খোঁজা এবং ক্রমে শক্তিমান হয়ে ওঠার যুক্তিকাঠামো। এমনকী যারা গেম খেলছে না ফেসবুক তথা মেটাভার্সের দৌলতে তারাও গেমদুনিয়ার অংশ। গেমারদের একটা বড় অংশই তাদের বিপদসঙ্কুল যাত্রাপথটা লাইভ শেয়ার করেন ফেসবুকে। লক্ষ লক্ষ লোক ভিএফএক্স নির্ভর সেই অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে একাত্মবোধ করেন, না খেলেও দর্শক খেলাটি খেলতে থাকেন মনে মনে, নায়ক আর দর্শকের মধ্যে থাকা দেওয়ালটি ভেঙে যায়। যারা দেখছে তারা সকলেই ওই নায়ক, মনে মনে। গেমারের আয় হয় সেই ভিডিওয় ফেসবুকের দেওয়া বিজ্ঞাপনের কমিশন থেকে। কোভিডের দুই বছর ঘরে সেঁধিয়ে যাওয়ার নিয়তি এই প্রবণতাকে জল-সার দিয়েছে। শাহরুখ জানতেন এই মনকে উপড়ে মশলা ছবিতে আনা যাবে না। বরং যদি গেমদর্শনকে ছবির আঙিনায় নিয়ে ফেলা যায়, তখন ভিএফএক্স যদি আজগুবিও হয় তবু প্রশ্ন করবে না কেউ। 

ছবির একটি গান আসে সমস্যার অংশ হিসেবে। অন্য গানটি আসে একেবারে শেষে। কেন শেষে? কারণ মশলা ছবির ক্ষেত্রে গান ছবির শরীরে লতানো গাছের মতো জড়িয়ে গেলেও গেমিং পৃথিবীতে ওই নাচাগানা একটা পুরস্কার (রিওয়ার্ড) , তার জন্যে তাকে আগে সাফল্য পেতে হয়। এখানে দর্শককে পাঠানের সঙ্গে সুপার মারিওর মতো ছুটতে হয় সাফল্যের পথ অনুসন্ধানে, শেষে উপহার নয়নাভিরাম দীপিকার সঙ্গে পাঠানের উদ্দাম নাচ। পাশাপাশি গেমের মতোই পরের স্টেজ শুরুরও ইঙ্গিত থাকে। বোঝাই যায়, সেই নতুন আখ্যানও তৈরি হবে সমস্যা তৈরি ও সমাধান খোঁজার অভিযানের ছকেই।

গেমিং দর্শন কি শাহরুখই প্রথম ব্যবহার করছেন? উত্তর, না। দক্ষিণি ছবি কেজিএফ এরও আগে এই জুতোয় পা গলিয়েছে। আসবে বাহুবলীর কথাও। এমন অনেক ছবিই দক্ষিণে তৈরি হয়েছে যা ভিএফএক্স নির্ভর, যার পরতে পরতে চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ভাবলেই বোঝ যাবে, কেজিএফ-এ নায়কের মানবিক দোষগুণ, প্রেম, প্রতিদিনের চলাফেরা যেভাবে গুরুত্ব পেয়েছে পাঠানে তা সেভাবে আসেনি, এখানে মূল কথাটাই- মিশন, একের পর এক মিশন। ভিডিও গেমের দর্শনের মূল কথা, মানুষ মরণশীল তবু সে মনুষ্যেতর হয়ে উঠতে চায়, শ্রমে ত্যাগে সে পারেও শক্তিমান হয়ে উঠতে, বড় শত্রুকে সরিয়ে ক্ষমতার দখল নিতে, সেই শত্রু মানুষও হতে পারে, অন্য জীবজন্তুও হতে পারে, এমনকী কাল্পনিক কোনও প্রাণও হতে পারে। ঘনঘন ট্রেডমিলে দৌড়নো পাঠান আসলে তো সেই চরিত্রই যে মৃত্যুকে ছুঁয়ে অমরত্বের অভিলাষ বুকে বাঁচে। এই বাঁচার তাগিদটাই সংক্রমিত হয় দর্শকদের মধ্যে, দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের বোধটাই সে চাড়িয়ে দেয়। মনে রাখতে হবে, গেমসের প্রেক্ষাপট কিন্তু বহু সময়েই বাস্তব থেকেই তুলে নিয়ে সাজানো হয়, শুধু সমাধানের সম্ভাবনার জায়গাটা বহুস্তরীয় করে দেওয়া হয়। যেমন কল অৰ ডিউটি গেমটা বানানোই হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মিত্রশক্তি-অক্ষশক্তির দ্বন্দ্বের আবহে। সেখানে বন্দুক হাতে যে সুড়ঙ্গ, রেলপথ পেরিয়ে দৌড়ে চলে সে, যে আসলে গেমটা খেলছে বা দেখছে। উভয়েরই পাখির চোখ সাফল্য, অন্য কোনও মানুষী আবেগ তার চেয়ে এক্ষেত্রে বড় নয়। পাঠান এই আদর্শেই নির্মিত, সাফল্যের রহস্যটা এটাই।

অনেকে মার্বেল সিনেমার হিরোর কথা বলবেন। শাহরুখ নিজেও মার্বেল সিনেমার ব্যাপারে অত্যুৎসাহী। কিন্তু মার্বেল ছবির প্রোটাগনিস্টের সমস্যা সমাধান আর শক্তি বাড়ানোটাই একমাত্র ধর্ম নয়। বরং উইল স্মিথ অভিনীত পশ্চিমি ছবিগুলির সঙ্গে এই ছবিকে মিলিয়ে পড়তে পারেন যেখানে বারবার প্রতিকূলতা আসে, ট্র‍্যাজেডির জন্ম হয়, তবু নায়ক জিতে যায়। বিশ্বসংসারের মঙ্গলচিন্তাই এর মূল কথা।

চার বছর ধরে শাহরুখ যখন নিজেকে তৈরি করছিলেন, সেই সময়তটে আমূল বদলে গিয়েছে বিনোদনের ভাষা। পোস্টট্রুথ মানুষের মনের দখল নিচ্ছে প্রতিদিন। ফেক নিউজ, হিংসা, ভয়, ঘৃণা-এইগুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে দিনযাপনের সূচক। এর পাশাপাশি মানুষের সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে করোনার কারণে। সমষ্টিগতভাবে সে যা দেখেছে এতকাল, তাকেই সে পেতে চেয়েছে মুঠোফোনে, দু’বছর মুঠোফোনেই সে সিনেমা সিরিজ দেখায় ধাতস্থ হয়েছে। আবার এই ফোনেই সে ডাউনলোড করেছে নানা গেমস। না খেললেও ফেসবুক মারফত তার চোখ ধাতস্ত হয়েছে গেমসের দৃশ্যপটে। স্টারওয়ারের মতো ছবি গেম হয়ে ফিরে এসেছে বহুকাল আগে। বহু বলিউড ছবিও এখন স্মার্টফোন গেম।  এগুলির সঙ্গে বোঝাপড়া বেড়েছে করোনাকাল প্রশ্ন হল, একক থেকে যখন সমষ্টিতে যাওয়ার সুযোগ এল আবার সে তখন কোন মন নিয়ে যাবে? পুরনো মশলা ছবি দেখার একক মন? নাকি রোগ আর হিংসার ভয়ে সিটিয়ে থাকা সমষ্টিমন যা মুক্তি চায়, জিততে চায়, ক্ষমতায়ন চায়?

শাহরুখ খান একজন শিল্পী, তার থেকেও বড় কথা তিনি বিপণন বিশারদ, তিনি স্রেফ শিল্প বিক্রি করতে আসেননি, এই পরিত্রাণের তাড়নাটায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন গেমলজিক আমদানি করে। শাহরুখের পাঠান ছবি থেকে গেমের দিকে যাওয়া নয়, গেমভুবনকেই সফল ভাবে সিনেমায় নিয়ে নেওয়া। এই কল্পলোক তৈরি হয়েছে আমাদের বাস্তবের চেনা শত্রু করোনা, পাকিস্তান, চেনা সমস্যা ৩৭০ রদকে সামনে রেখেই। গেমের পৃথিবী আজও প্রোপাগন্ডার চাপ মুক্ত, সামাজিক ভাবে যা ভালো, সেই মহৎ ন্যায়কে পুঁজি করেই এই বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়। তাই পাঠান কখনওই কাশ্মীর ফাইলসের দিকে ঝুঁকবে না, বরং কল অফ ডিউটির মতো এর পর তালে জম্বির সঙ্গে লড়তে হতে পারে। এমন ভাবেই কাশ্মীর সমস্যা এসেছে ছবিতে, যাতে একজন কাশ্মীরি এই ছবির নায়কের সঙ্গে দৌড়ে নিজে জিতে যাবে। ভিডিও গেমে মূল চরিত্র জিতে গেলে আসলে গেমারই জিতে যান, জিতে যায় যে দেখছে সেও। এখানে কেউ প্রতিপক্ষের হয়ে বাজি ধরে না। শাহরুখের হাত ধরে পাঠানে দৌড়য় অপর ভারতবর্ষ। জিতেও যায় অপর ভারতবর্ষ। মানুষ প্রতিদিন যা চায় কিন্তু পায় না, সেই মহৎ ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ছবিও হিট কারণ পাঠান একশো তিরিশ কোটিকে একটা গেমে, একই গন্তব্যে দৌড় করাচ্ছে। যে গন্তব্যে পৌঁছলে, ধর্মের জন্য কাউকে প্রমাণ দিতে হবে না সে ভারতীয় কিনা। দেশাত্মবোধক গান বলপূর্বক গাইতে হবে না দেশের প্রতি অনুরাগ প্রমাণের জন্য। পাঠান জিতল এবং জেতাল। কিন্তু বলিউড? শুরুতে যা বলছিলাম, পাঠান তার কফিনে গভীরতম পেরেক।

Arka Deb

About Author

You may also like

article
Interview Writing

Hands-On With Borderlands 3 And 2 New Vault Hunters

There are many variations of passages of Lorem Ipsum available but the majority have suffered alteration in that some injected
article
Interview Writing

Tesla’s Cooking Up A New Way To Wire Its Cars, Report Says

There are many variations of passages of Lorem Ipsum available but the majority have suffered alteration in that some injected

Arka Deb is presently the Editor-in-Chief at Inscript.me. In the past, Arka has worked as Senior Journalist at CNN Network 18, Asianet News and Anandabazar Patrika.